২.১.২ লেয়ারের সুষম খাদ্য তৈরির বিবেচ্য বিষয়সমূহ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

২.১.২ লেয়ারের সুষম খাদ্য তৈরির বিবেচ্য বিষয়সমূহ

সুষম খাদ্য কী?

 মুরগির দেহের নির্বাহী কার্য পরিচালনা, শারীরিক বৃদ্ধি, উৎপাদন, পালক গঠন ও দেহের মধ্যে অন্যান্য কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য চাহিদা অনুপাতে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে তৈরিকৃত খাদ্যকে সুষম খাদ্য বা রেশন বলে। সুষম খাদ্যে আমিষ, শর্করা, চর্বি, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন ও পানি সঠিক অনুপাত অনুযায়ী বিদ্যমান থাকে। বিভিন্ন খাদ্যবস্তুতে এ সকল উপাদান বিভিন্ন পরিমাণে থাকে।

সুষম খাদ্যের গুরুত্ব: 

মুরগিকে সুষম খাদ্য প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি সুষম খাদ্য মুরগিকে সরবরাহ না করা হয় তবে যে খাদ্য উপাদানের ঘাটতি থাকে তার কারণে নানা রকম অসুবিধার সৃষ্টি হয়।

মুরগিকে সুষম খাদ্য প্রদান করলে নিম্নলিখিত সুবিধাসমূহ পাওয়া যায়:

  • উৎপাদন (ডিম, মাংস, ডিম ফোটার হার, সুস্থ সবল বাচ্চা) বৃদ্ধি পায়। 
  • অপুষ্টিজনিত রোগ এবং অন্যান্য রোগ কম হয়।
  • সম্পদ ও শ্রমিকের সুষ্ঠু ব্যবহার হয়। 
  • খামারে লাভ বেশি হয়। 
  • খামারের ব্যবহারিক মান বৃদ্ধি পেয়ে বাজারের প্রসার ঘটে।
  • উৎপাদন বাড়ায়, খামারি লাভবান হয়। 
  • ডিম এবং মাংসের গুণগতমান ভালো হয় ।
  • অল্প জায়গায় অধিক ঘনত্বে মুরগি পালন করা যায় । 
  • অল্প সময়ে বড় আকারের সুস্থ সবল মুরগি পাওয়া যায় ।
  • মুরগির বাঁচার হার বৃদ্ধি পায় । 
  • মুরগির মৃত্যু হার হ্রাস পায় ৷

পুষ্টির উৎস অনুসারে সুষম খাদ্যে উপাদান যোগ করার নিয়ম: 

১. শক্তির জন্য: দানাশস্য ও এর উপজাত ৬০-৬৫ % 

২. আমিষের জন্য: প্রাণিজ উৎস; ৫-১৫%, উদ্ভিজ্জ উৎস; ১৮-২২% 

৩. খনিজ মিশ্রণ: ২-৯% ৪. ভিটামিন: ভিটামিন প্রিমিক্স প্রতি ১০০ কেজিতে ২৫০-৩০০ গ্রাম ।

 

লেয়ারের সুষম খাদ্য তৈরির ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অবশ্যই বিবেচনা করতে হয় - 

১. খাদ্যসামগ্রী বা উপকরণের সহজপ্রাপ্যতা: 

সুষম খাবার তৈরিতে পরিচিত ও সহজলভ্য উপকরণ নির্বাচন করা উচিত। পরিচিত উপকরণের গুণগতমান সহজে জানা যায় । স্থানীয় মূল্য যাচাই করা যায়। কোনো উপকরণের ঘাটতি পড়লে সহজে সংগ্রহ করা যায়। সহজলভ্য উপকরণের পরিবহন খরচ কম হয়। বিভিন্ন মৌসুমে উৎপাদিত দ্রব্য স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ ও মজুদ করা যায়। উপকরণের গুণগতমান খারাপ হলে পরিবর্তন করা যায় ।

২. উপকরণের মূল্যঃ 

খাদ্য উপকরণ যত সস্তায় সংগ্রহ করা যায়, খাদ্য প্রস্তুতে খরচের তত সাশ্রয়ী হয়। ফলে ডিম উৎপাদনে খরচ কমে যায়। খামারে মোট খাদ্য খরচের ৬৫-৭৫ ভাগ পর্যন্ত খরচ হয় খাদ্যের জন্য। মানুষের খাদ্য উপকরণের সাথে প্রতিযোগিতা কমাতে যতদুর সম্ভব সস্তায় বিকল্প খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করা উচিত। 

৩. খাদ্যের গুণগতমান: 

প্রস্তুতকৃত খাদ্য অবশ্যই গুণগতমানের হওয়া উচিত, খাদ্য প্রস্তুতের পূর্বে প্রতি উপকরণের পুষ্টিগত গুণাগুণ ও ভৌত অবস্থা (পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ) পরীক্ষা করতে হয়। কোনো প্রকার পচা, ছত্রাক যুক্ত অথবা গন্ধযুক্ত খাবার ব্যবহার করা যাবে না। যে সমস্ত কারণে খাদ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়, তা হলো-

  • উপকরণে আর্দ্রতা (১২% এর উপরে হলে) বেশি থাকলে 
  • বেশি পুরোনো হলে 
  • সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে
  • ঘরের মেঝে ভিজা ও আর্দ্র থাকলে 
  • তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বেশি থাকলে 
  • সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত না করার ফলে
  • পোকা ও ইঁদুরের আক্রমণ হলে, ভেজাল থাকলে 
  • খাদ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করার সময় কীটনাশক ব্যবহার করলে 
  • ছত্রাক ও মোল্ডযুক্ত খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করলে

৪. খাদ্যের পরিপাচ্যতা ও সুস্বাদুতা: 

রুচিসম্মত খাদ্য না হলে মুরগি খায় না। দানা জাতীয় খাদ্য বেশি মিহি হলে মুরগি কম খায়। কোনো উপকরণের দানা বড় থাকলে মুরগি বেছে বড় দানা আগে খায়, ফলে অন্যান্য উপাদান তলে পড়ে থাকে। বেশি আঁশযুক্ত খাদ্য ব্যবহার করা উচিত নয়। উপকরণের মিশ্রণ সুষম হতে হবে এবং প্রতিটি উপাদানের দানা যতদূর সম্ভব সুষম হতে হবে। খাদ্যের ভেজাল মিশ্রিত থাকলে এবং খাদ্য পচা ও ছত্রাকযুক্ত হলে মুরগি খাদ্য পছন্দ করবে না। ক্রাম্বল ও পিলেট খাদ্য মুরগি বেশি পছন্দ করে ।

৫. জাত: 

হালকা জাতের লেয়ারের তুলনায় ভারী জাতের লেয়ার বেশি খাদ্য খায়। সাদা জাতের লেয়ারের তুলনায় রঙিন জাতের লেয়ার বেশি খাদ্য খায়। 

৬. বয়সঃ 

বয়স অনুসারে বিভিন্ন পুষ্টিমানের খাদ্য ব্যবহার করা হয়। বাচ্চা অবস্থায় বেশি শক্তি ও আমিষের প্রয়োজন, ডিম পাড়া মুরগির খাদ্যে শক্তি ও আমিষের প্রয়োজন পরিমাণ বাচ্চার তুলনায় কম লাগে ৷ 

৭. লিঙ্গ: 

মোরগ-মুরগির তুলনায় বেশি খাদ্য খায় এবং দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায়। 

৮. ওজন: 

লেয়ার মুরগির ওজন বৃদ্ধি সমানুপাতে না হলে, কম ওজনের মুরগিকে আলাদাভাবে খাদ্যে আমিষের হার বৃদ্ধি করে খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। 

৯. আবহাওয়াঃ 

পারিপার্শ্বিক আবহাওয়ায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি হলে খাদ্য খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়। ফলে শরীরের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে খাদ্যে পুষ্টিমান পুনর্বিন্যান্ত করতে হয়। 

১০. বিভিন্ন খাদ্য উপাদান ব্যবহার করার পরিমাণ বা মাত্রা:

 

 

 

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion